📰 যেসব জেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে: বর্তমান পরিস্থিতি (২০২৫)

Posted on August 9, 2025 by web-CEO
bangladesh

ভূমিকা

বাংলাদেশে বর্ষা এলেই বন্যা এক অনিবার্য বাস্তবতা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমে একাধিক জেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফসল, ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এবারের বন্যার পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় ভিন্ন। কিছু এলাকায় পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কিছু এলাকায় পানি জমে থাকায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এখন আমরা দেখে নেব কোন জেলায় কী অবস্থা এবং কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

প্লাবিত জেলা ও বর্তমান অবস্থা

সরকারি ও বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া ও জামালপুর

সিলেট ও সুনামগঞ্জ

  • টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
  • শহরের প্রধান সড়ক, বাজার ও গ্রামীণ এলাকা পানির নিচে।
  • তবে সুরমা নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে, যা স্বস্তির খবর।

কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা

  • ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি।
  • অনেক গ্রামে নৌকা ছাড়া যাতায়াত সম্ভব নয়।
  • তবে কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করায় পুনর্বাসন কার্যক্রম চলছে।

লালমনিরহাট ও নীলফামারী

  • তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
  • কৃষি জমিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
  • ফলে স্থানীয় কৃষকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

বগুড়া ও জামালপুর

  • যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
  • ঘরবাড়ি ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
  • তবে স্থানীয় প্রশাসন ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে।

মানুষের দুর্ভোগ

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

  • অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে স্কুল বা উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
  • পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে।
  • নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া, বাজারে সবজি ও মাছের দাম বেড়ে গেছে। ফলে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

সরকারের ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম

সরকার ইতিমধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে অনেক দুর্গম এলাকায় এখনো সহায়তা পৌঁছায়নি।

বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবকরাও উদ্ধার কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন। তারা নৌকায় করে দুর্গত এলাকায় খাবার ও পানি পৌঁছে দিচ্ছেন।

করণীয়

বন্যার সময় ও পরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—

বন্যার সময়:

  1. উঁচু স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান।
  2. বিশুদ্ধ পানি ছাড়া খাবার বা পানি গ্রহণ করবেন না।
  3. বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

বন্যা শেষে:

  1. বাড়ি ফিরবার আগে নিশ্চিত করুন যে মাটি ও পানি নিরাপদ।
  2. ক্ষতিগ্রস্ত দেয়াল ও বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করুন।
  3. স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী পানি বিশুদ্ধ করুন।

দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি

যদিও বন্যা হঠাৎ করে আসে, তবুও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিলে ক্ষতি কমানো যায়।

  • নদীর পাড়ে বাঁধ ও বেড়িবাঁধ মজবুত করা দরকার।
  • পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছানো জরুরি।

যেসব জেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে: বর্তমান পরিস্থিতি (২০২৫)

পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ

২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের অন্তত ১৫টির বেশি জেলায় নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, জামালপুর এবং নেত্রকোনা জেলায় পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।

তবে শুধুমাত্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের কিছু জেলার নিম্নাঞ্চলও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে কৃষি জমি, বসতবাড়ি এবং সড়ক যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

প্রথমত, সিলেট ও সুনামগঞ্জ এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৫০-৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শহরের অনেক অংশে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে। বাজার, স্কুল এবং হাসপাতাল পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে গেছে।

দ্বিতীয়ত, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এখানকার বহু মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে গ্রামেগঞ্জে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলাতেও নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যেসব এলাকায় বাঁধ দুর্বল, সেগুলোতে যেকোনো সময় ভাঙন দেখা দিতে পারে।

অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি

এই বন্যায় হাজার হাজার একর ধান ও শাকসবজির জমি পানির নিচে চলে গেছে। অনেক জায়গায় মাছের ঘের ভেসে গেছে। সড়ক ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলস্বরূপ, দুর্গত এলাকার মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে।

তবে প্রশাসন জানিয়েছে, সেনা, নৌ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা একযোগে কাজ করছে। তারা নৌকা দিয়ে দুর্গত এলাকায় খাদ্য, পানি এবং ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে।

মানুষের দুর্দশা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

বন্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময় ডায়রিয়া, টাইফয়েড এবং চর্মরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই সবাইকে ফুটানো পানি বা বোতলজাত পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, অনেকে গৃহপালিত পশু নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কারণ আশ্রয়কেন্দ্রে পশু রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেকেই ঘরের ভেতরে পশু রাখতে বাধ্য হচ্ছেন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

সরকারের প্রস্তুতি ও ত্রাণ কার্যক্রম

সরকার ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে জরুরি ত্রাণ পাঠানো শুরু করেছে। এর পাশাপাশি, ৫০০টিরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকরা নৌকাযোগে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন।

তবে ত্রাণ কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেক জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই ত্রাণ পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই নিম্নাঞ্চলের মানুষদের আগেভাগেই নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, খাদ্য মজুত রাখা, প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত রাখা এবং চার্জ লাইট বা সোলার লাইটের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উপসংহার

২০২৫ সালের বন্যায় বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সরকার ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

তাই, আমরা সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রতিবেশী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ, বন্যা শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি আমাদের সামাজিক ঐক্যেরও পরীক্ষা।বন্যা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়, তবে প্রতিবারই তা নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। এখন প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ, যাতে দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসন দ্রুত সম্পন্ন হয়। সরকার, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ মানুষ একসঙ্গে কাজ করলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *